অপরাধ বাংলাদেশ সর্বশেষ

আমার যেই ছেলে একটা মুরগি কাটা দেখতে পারত না, গরু কাটার সময় যাকে লুকায়ে রাখা লাগতো

faisal ahmed shanto

আমার যেই ছেলে একটা মুরগি কা/টা দেখতে পারত না, গরু কা/টার সময় যাকে লুকায়ে রাখা লাগতো, সেই ছেলের শরীরে এত র/ক্ত আমি দেখছি! আমার মানিকটারে কে যে শেষ করে দিয়ে গেল!…”
‘আন্দোলনে যাওয়ার জন্য ওইদিন শান্ত একরকম তাড়াহুড়া করেই টিউশনি শেষ করছিল। বলে আসছিল, পরের দিন বেশি সময় পড়ায়ে দিবে।
বাসার চাবি সবসময় একটা থাকতো শান্তর কাছে, আরেকটা আমার কাছে। ওর চাবিটা আমাকে কখনো দিত না। কিন্তু ওইদিন কেন জানিনা, নিজে ডেকে আমাকে চাবি দিয়ে গেছিল। হয়ত বুঝতে পারছিল, আর আসবে না৷
ওইদিন আমার ছেলের চেহারাও কেমন যেন লাগতেছিল খুব হাসিখুশি, মায়াবী মায়াবী!
পরোটা আর চা বানায়ে রেখে দিছিলাম, যেন সন্ধ্যায় এসে খায়। বাইরের কিছু তেমন খাইতে পারত না।
আমি জানতাম না আমার ছেলে নাই, গু/লি লাগছে এই কথা বলে ওর বন্ধুরা আমাকে মেডিকেল নিয়ে গেছিল।
থানার ওসি যখন ‘ফয়সালের আম্মু কোথায়’ বলে বলে ডাকতেছিল, আমি দৌড়ায়ে গেছি। ভাবছি শান্তমনি হয়ত ওয়ার্ডে ভর্তি হইছে, আমাকে খুঁজতেছে, এই কারণে ডেকে নিয়ে যাচ্ছে।
আমাকে সবাই স্বান্তনা দিচ্ছিল শুধু, আমি বলতেছিলাম আমাকে আমার শান্তমনির কাছে নিয়ে চলেন, আমি শান্ত হয়ে যাব। কিন্তু আমাকে নেয় না৷
আমাকে যখন মৃ’ত্যুর খবর শুনাইছে, আমি বিশ্বাস করিনাই। মনে হচ্ছিল হয়ত স্বপ্ন দেখতেছি। এখনো মাঝেমধ্যে মনে হয়, আমার শান্তমনি আছে, এগুলা সব স্বপ্ন।
আমার যেই ছেলে একটা মুরগি কা/টা দেখতে পারত না, গরু কা/টার সময় যাকে লুকায়ে রাখা লাগতো, সেই ছেলের শরীরে এত র’ক্ত আমি দেখছি! আমার মানিকটারে কে যে শেষ করে দিয়ে গেল!
আমাকে যখন লা’শ দেখাইতে নিয়ে গেল, আমি তখনো ভাবছি গিয়ে দেখব অন্য কেউ শুয়ে আছে। আমার শান্তমনি হয়ত আন্দোলন থেকে কোথাও গিয়ে লুকায়ে আছে। কিন্তু স্ট্রেচারে করে আমার মানিকটারেই নিয়ে আসলো।
এর ভিতরে আবার শান্ত’র দুই বন্ধুকে এরেস্ট করে তাদেরকেই শান্ত’র হ/ত্যা/মামলা দিয়ে দেয়।
ওর জন্ম চট্টগ্রামে, বেড়ে ওঠা চট্টগ্রামে, তবু এখানে একটা জানাজাও হইতে দিল না, পুলিশ প্রটোকলে বরিশাল নিয়ে যাওয়া লাগলো৷ দাফনও সেখানে হয়।
আমার ছেলে খতম তারাবি কোনোদিন মিস দিত না। মিস হবে ভেবে এমনকি রমজানে কোথাও বেড়াইতেও যাইত না। আর এই বছর পড়ারই কেউ নাই!
একটা ভাল মানুষ হিসাবে আমি শান্তমনিকে বড় করছি। আমি হয়ত আর ওর রক্ষণাবেক্ষণের উপযুক্ত ছিলাম না, এই কারণে আল্লাহ নিজের কাছে নিয়ে গেছে। যতদিন উপযুক্ত ছিলাম ততদিন ও আমার কাছে ছিল। সান্ত্বনা শুধু এইটুকুই, আল্লাহ যেন আমার ছেলেকে শহিদ হিসাবে কবুল করে।
জানেন, জীবন আমার কাছে এখন আর মূল্যবান কিছু না। অপেক্ষা করেই আছি কখন আমার ছেলের কাছে চলে যাব।’
– July Records কে দেয়া শ’হী’দ ফয়সাল আহমেদ শান্ত’র মা মিসেস কোহিনূর আক্তারের বক্তব্য।