আল–জাজিরার এক্সপ্লেইনার
ইরানে গত শুক্রবার ইসরায়েলের বিমান হামলার পর পাল্টা জবাবে তেহরান দেশটিতে শত শত ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ছুড়েছে। এর মধ্যে কিছু ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের উন্নত আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে ভেদ করে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে।
ইসরায়েলের ধারাবাহিক হামলায় ইরানে এ পর্যন্ত ৭০ নারী–শিশুসহ ২৪০ জনের বেশি নিহত হয়েছেন। এর জবাবে ইরান প্রায় ৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র ও কয়েক শ ড্রোন নিক্ষেপ করে। এতে ইসরায়েলে অন্তত ২৪ জন নিহত এবং শত শত মানুষ আহত হন। দেশজুড়ে ইসরায়েলিরা আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে বাধ্য হন।
ইরানের কিছু হামলা ইসরায়েলের মধ্যাঞ্চলের আবাসিক এলাকায় আঘাত হেনেছে, যাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এমনকি তেল আবিবে অবস্থিত সুরক্ষিত ইসরায়েলি সামরিক সদর দপ্তর কিরিয়াতেও হামলার ঘটনা ঘটে। তবে সেখানে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ছিল সীমিত।
গতকাল মঙ্গলবার ইরান দাবি করেছে, তারা ইসরায়েলের সামরিক গোয়েন্দা কেন্দ্র ও বৈদেশিক গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের একটি পরিকল্পনা কেন্দ্রে আঘাত করেছে। এর মাধ্যমে ইসরায়েলের সবচেয়ে উন্নত ও বিশ্বের সর্বাধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষাব্যূহ ভেদ করতে সক্ষম হয়েছে তারা।
সাম্প্রতিককালের ইতিহাস বলছে, ইসরায়েল আয়রন ডোমের মতো তার আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থাগুলোর মাধ্যমে দেশটিতে বেশির ভাগ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা সফলভাবে প্রতিহত করেছে।
তাহলে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র কীভাবে ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যূহ ভেদ করছে, জানা যাক সেই প্রশ্নের উত্তর।
আয়রন ডোম কী
ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার প্রাণকেন্দ্রে রয়েছে ‘আয়রন ডোম’। তবে এটি একটি বৃহত্তর বহুস্তর ও সমন্বিত প্রতিরক্ষাব্যবস্থার নিচের স্তরমাত্র বলে জানিয়েছেন আল–জাজিরার প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক অ্যালেক্স গ্যাটোপুলোস।
আয়রন ডোম ধেয়ে আসা কোনো রকেট বা ক্ষেপণাস্ত্রকে শনাক্ত, এর গতিপথ নির্ধারণ ও ধ্বংস করে। ইসরায়েলের দাবি, এ ব্যবস্থা ৯০ শতাংশ সফল। লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর সঙ্গে মূলত ২০০৬ সালে সংঘটিত যুদ্ধের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে ইসরায়েল ২০১১ সালে এ ব্যবস্থাকে সক্রিয় করে। তখন হিজবুল্লাহর রকেট হামলা প্রতিহত করতেই আয়রন ডোম প্রতিরক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়।
গ্যাটোপুলোস জানান, আয়রন ডোম নিচু উচ্চতার রকেট থামানোর জন্য তৈরি, যেগুলো বৃহত্তর প্রতিরক্ষাব্যবস্থায় ধরা পড়ে না।
আয়রন ডোম ধেয়ে আসা কোনো রকেট বা ক্ষেপণাস্ত্রকে শনাক্ত, এর গতিপথ নির্ধারণ ও ধ্বংস করে। ইসরায়েলের দাবি, এ ব্যবস্থা ৯০ শতাংশ সফল। লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর সঙ্গে মূলত ২০০৬ সালে সংঘটিত যুদ্ধের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে ইসরায়েল ২০১১ সালে এ ব্যবস্থাকে সক্রিয় করে। তখন হিজবুল্লাহর রকেট হামলা প্রতিহত করতেই আয়রন ডোম প্রতিরক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়।
ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা
দূরপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে ইসরায়েল ব্যবহার করে অ্যারো-২ ও অ্যারো-৩ ব্যবস্থা, যেমনটা বর্তমান ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে তেহরানের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে ব্যবহার করছে তেল আবিব। এই ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধব্যবস্থা তৈরি করেছে ইসরায়েলের রাষ্ট্রায়ত্ত ‘ইসরায়েল অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজ’, যার সঙ্গে যুক্ত আছে মার্কিন সংস্থা বোয়িং।
অ্যারো-২ ব্যবস্থাটি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের ভেতর ও বাইরে উভয় ক্ষেত্রে খানিকটা উচ্চতার ক্ষেপণাস্ত্র থামাতে সক্ষম।
এ ছাড়া ‘আকাশ থেকে আকাশ’ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ব্যবহার করে থাকে ইসরায়েল। এ ব্যবস্থায় ধেয়ে আসা ড্রোন বা ক্ষেপণাস্ত্র যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টারের সাহায্যে আকাশ থেকে ধ্বংস করে তারা।
ইন্টারসেপ্টর (আক্রমণ প্রতিহতকারী ক্ষেপণাস্ত্র) যদি কমে যায়, তাহলে আর বেশিসংখ্যক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ করা যায় না। এ ছাড়া কোনো প্রতিরক্ষাব্যবস্থাই শতভাগ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ঠেকাতে পারে না।
আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা কীভাবে কাজ করে
ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা মূলত তিনটি অংশ নিয়ে গঠিত: রাডার ব্যবস্থা, কমান্ড সেন্টার ও প্রতিরোধী ক্ষেপণাস্ত্র–সংবলিত লঞ্চার।
লন্ডনের কিংস কলেজের পোস্টডক্টরাল গবেষক মেরিনা মিরন আল–জাজিরাকে বলেন, শত্রুপক্ষের ক্ষেপণাস্ত্র আসতে থাকলে প্রথমে রাডার সেটি শনাক্ত করে, পরে কমান্ড সেন্টারে সতর্কবার্তা পাঠানো হয়। এ সেন্টার মূল্যায়ন করে, কোন ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করা হবে। এরপর লঞ্চার সাধারণত ধেয়ে আসা কোনো ক্ষেপণাস্ত্র থামাতে দুটি প্রতিরোধী ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে।
তবে সব প্রতিরক্ষাব্যবস্থার মতো ইসরায়েলের এ প্রতিরক্ষাব্যবস্থাতেও সীমিতসংখ্যক প্রতিরোধী ক্ষেপণাস্ত্র আছে। ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থায় ঠিক কতটি প্রতিরোধী ক্ষেপণাস্ত্র আছে, সেটি অজানা রয়ে গেছে।