বাংলাদেশ

এজেন্ট পয়েন্ট হঠাৎ বন্ধে সারাদেশে এজেন্টদের বিক্ষোভ, গ্রামীণ গ্রাহকদের মানববন্ধন

অগ্রণী ব্যাংক এজেন্ট পয়েন্ট বন্ধ করায় শত শত এজেন্ট ও গ্রাহক সড়কে নেমেছে

আজ দেশের বিভিন্ন গ্রামীণ অঞ্চলে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে অগ্রণী-দুয়ার অংশীদারিত্বে পরিচালিত এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা বন্ধ করে দেওয়ার প্রতিবাদে।

বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করেছে শত শত নারী/পুরুষ উদ্যোক্তা, যারা এজেন্ট আউটলেট চালাচ্ছেন। এর ফলে ৩,৫০০ জনের বেশি কর্মসংস্থান হুমকির মুখে, যার অর্ধেকেরও বেশি নারী। এতে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ও ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ে দেশের অগ্রগতি হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে।

“এই আউটলেট গড়তে আমি সব কিছু বিনিয়োগ করেছি,” বলেন বাবু হোসেন, পাবনা জেলার ৩৮ বছর বয়সী একজন এজেন্ট। “যদি ব্যাংক এরকম হঠাৎ এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়, আমি পরের মাসেই দেউলিয়া হয়ে যাবো।”

গ্রামীণ গ্রাহকদের উদ্বেগ: আমানত, স্বাক্ষর ও সুরক্ষার ঝুঁকি
এই পরিস্থিতিতে অনেক গ্রামীণ গ্রাহক — যারা বয়সে প্রবীণ বা স্বাক্ষর করতে জানেন না — তারা ইউনিয়ন পরিষদ ও এজেন্ট পয়েন্টের সামনে মানববন্ধন করেছেন।

“আমার একাউন্টে ৪২,০০০ টাকার রেমিট্যান্স এসেছে , এজেন্ট পয়েন্টে সেই টাকা তুলতে পারিনি। আমার চেকবই না থাকায় সদরে ব্যাংকের ব্রাঞ্চে গিয়েও টাকা তুলতে পারিনি। অথচ আমি বাড়ির কাছের এজেন্ট পয়েন্টে শুধুমাত্র আমার ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়েই নিরাপদে টাকা তুলতে পারতাম কোন ঝামেলা ছাড়া।” বলেন মাদারীপুরের স্বপ্না বেগম।

এজেন্ট পয়েন্টে বায়োমেট্রিক (আঙুলের ছাপ) দিয়ে গ্রাহক যাচাই হতো, যা শহরের শাখায় গিয়ে সম্ভব নয়। এতে ভুয়া স্বাক্ষর, হয়রানি ও অতিরিক্ত খরচ নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়ছে।

নীতিগত দ্বন্দ্ব: নারীদের অন্তর্ভুক্তি বনাম ব্যবসা বন্ধ
সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক একটি পরিপত্রে নারীদের এজেন্ট হিসেবে অন্তর্ভুক্তির আহ্বান জানালেও, বাস্তবে অগ্রণী-দুয়ার মডেলের নারীরা আজ ব্যবসা হারানোর দ্বারপ্রান্তে।

“আমি বুটিকের কাজ ছেড়ে অগ্রণী দুয়ার ব্যাংকিং-এর এজেন্ট হয়েছিলাম,” বলেন ঢাকার এজেন্ট নীলা তাবাসসুম। “এখন আমি আবার শূন্যতে চলে আসবো, যদি ব্যাংক তার এই হঠকারী সিদ্ধান্ত থেকে সরে না আসে।”

বেশ কয়েকজন অর্থনীতিবিদ মনে করছেন, এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা ৫ (জেন্ডার সমতা) ও ৮ (সত্‍কার্য ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি) অর্জনে এ ধাক্কা দেশের জন্য নেতিবাচক বার্তা দেবে।

আলোচনার অনুরোধ, সংকট সমাধানে তাগিদ
এখন পর্যন্ত দুয়ার বা অগ্রণী ব্যাংকের পক্ষ থেকে কোনো যৌথ বিবৃতি পাওয়া যায়নি। তবে অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গেছে, এর আগে ১৮ মে, ২৪ মে ও ৪ জুন তারিখে উভয় পক্ষের মধ্যে আলোচনার সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

অভিজ্ঞ মহল বলছে, এই অচলাবস্থার পরিণতি এক কোটির বেশি গ্রাহক এবং হাজারো উদ্যোক্তার জীবিকা হুমকির মুখে ফেলেছে।

নাগরিক সমাজ ও অর্থনীতিবিদরা এ ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন—বিশেষ করে পর্যায়ক্রমিক ট্রানজিশন, সঠিক অভিযোগ নিষ্পত্তি প্রক্রিয়া, ও আলোচনার মাধ্যমে সমাধান খোঁজার জন্য।