প্রকাশ: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ |
গাজা যুদ্ধ নিয়ে ওয়াশিংটনের প্রতি আন্তর্জাতিক হতাশা চলতি সপ্তাহে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে প্রকাশ্যে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রের মিত্ররা ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছেন। এটা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য নীতির জন্য বড় পরীক্ষা।
ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধ দ্রুত শেষ করার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পর ট্রাম্প এখন শুধু এক প্রত্যক্ষদর্শী। এ অবস্থায় ইসরায়েল ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় আক্রমণ বাড়িয়েছে। ওয়াশিংটন তাদের ঘনিষ্ঠ আঞ্চলিক মিত্রকে লাগাম দিতে তিনি অনিচ্ছুক।
বুধবার (২৪ সেপ্টেস্বর) রয়টার্সের প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। এতে বলা হয়, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু চলতি মাসের শুরুতে কাতারে হামাস নেতাদের ওপর হামলা চালিয়ে ট্রাম্পকে অন্ধ করে দিয়েছিলেন। এ হামলা গাজায় যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তি চুক্তি নিশ্চিত করতে ট্রাম্প প্রশাসনের সর্বশেষ চেষ্টাকে প্রায় ব্যর্থ করে দিয়েছে। তখন থেকে ইসরায়েল গাজা সিটিতে একটি স্থল অভিযান শুরু করে, যা যুক্তরাষ্ট্র কোনো আপত্তি ছাড়াই মেনে নিয়েছে। গাজায় ক্রমবর্ধমান মানবিক সংকটের মধ্যে বিশ্বব্যাপী নিন্দার ঝড় বইলেও যুক্তরাষ্ট্র চুপ।
ব্রিটেন, ফ্রান্স, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ মার্কিন মিত্রদের একটি বড় দল এ সপ্তাহে জাতিসংঘে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেয়। এটাকে হামাসের জন্য উপহার হিসেবে বর্ণনা করেছেন ট্রাম্প। ওয়াশিংটনের মিডল ইস্ট ইনস্টিটিউট থিঙ্ক ট্যাঙ্কের জ্যেষ্ঠ ফেলো ব্রায়ান ক্যাটুলিস বলেন, ট্রাম্প এ অঞ্চলে, বিশেষ করে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন শীর্ষ ফ্রন্টে কোনো বড় অগ্রগতি বা অর্জন করতে সক্ষম হননি। আসলে তিনি যখন ক্ষমতায় আসেন, তখন পরিস্থিতি অত্যন্ত খারাপ পর্যায়ে চলে গেছে।
প্রায় দুই বছর ধরে চলা সংঘাতের অবসান আগের চেয়েও বেশি দূরবর্তী বলে মনে হচ্ছে। গত জানুয়ারিতে ক্ষমতায় ফিরে আসার পর থেকে ট্রাম্প বারবার নিজেকে শান্তির দূত দাবি করেন এবং নিজেকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের যোগ্য বলে বর্ণনা করেন। ফরাসি রাষ্ট্রপতি ইমানুয়েল মাখোঁ গত মঙ্গলবার বলেন, ট্রাম্প যদি সত্যিই নোবেল জিততে চান, তাহলে তাঁকে গাজায় যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে।
নিউইয়র্ক থেকে ফ্রান্সের বিএফএম টিভিকে মাখোঁ বলেন, ‘একজন ব্যক্তি আছেন, যিনি এ বিষয়ে কিছু করতে পারেন, আর তিনি হলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তিনি আমাদের চেয়ে বেশি কিছু করতে পারেন। কারণ, আমরা এমন অস্ত্র সরবরাহ করি না, যা গাজায় যুদ্ধ পরিচালনার সুযোগ করে দেয়।’
মধ্যপ্রাচ্যের মিত্রদের সঙ্গে যোগাযোগ গাজা নিয়ে কম জড়িত দেখা গেলেও গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সাইডলাইনে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, মিসর, জর্ডান, তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া ও পাকিস্তানের সঙ্গে বৈঠক করেন ট্রাম্প।
অ্যাক্সিওস জানিয়েছে, ট্রাম্প হামাসের সম্পৃক্ততা ছাড়াই গাজায় যুদ্ধ-পরবর্তী শাসন ব্যবস্থার জন্য মার্কিন প্রস্তাবনা উপস্থাপন করবেন এবং সেখানে নিরাপত্তার জন্য আরব ও মুসলিম দেশগুলোকে সামরিক বাহিনী অবদান রাখতে চাপ দেবেন।
জাপানের হুঁশিয়ারি ইসরায়েল যদি মধ্যপ্রাচ্যের আল আকসা অঞ্চলে দ্বিরাষ্ট্র সমাধান (টু-স্টেট সলিউশন) নীতি বাস্তবায়নে বাধা দেয়, তাহলে তেল আবিবের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে দেওয়া ভাষণে তিনি এ হুঁশিয়ারি দেন। টাইমস অব ইসরায়েল এ খবর জানিয়েছে।
ভাষণে ইশিবা বলেন, ‘জাপান এখনও ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়নি। তবে এ স্বীকৃতি সময়ের ব্যাপার মাত্র। জাপানের জনগণ দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের পক্ষে ও উপযুক্ত সময়ে আমরা ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেব।
সম্প্রতি ইসরায়েলের জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তারা একাধিকবার দ্বিরাষ্ট্র সমাধান ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাব সরাসরি প্রত্যাখ্যান করছেন। এতে জাপানের জনগণ খুবই ক্ষুব্ধ। তিনি বলেন, ‘আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই– ভবিষ্যতে যদি ইসরায়েল কখনও দ্বিরাষ্ট্র সমাধান বাস্তবায়নের পথে কোনো ধরনের বাধা দেয়, তাহলে তার প্রতিক্রিয়া হিসেবে জাপান কিছু নতুন পদক্ষেপ নেবে এবং সেসব পদক্ষেপ হবে কঠোর।’
বাড়ছে বাস্তুচ্যুতি, এক দিনে নিহত আরও অর্ধশতাধিক ইসরায়েলের হামলায় গাজায় গতকাল বুধবার এক দিনে আরও অর্ধশতিাধিক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। আলজাজিরা জানায়, গাজা সিটির অনেকটা অভ্যন্তরে প্রবেশ করেছে ইসরায়েলের ট্যাঙ্ক। সেখানে থেকে বাস্তুচ্যুতি অব্যাহত আছে। গতকাল গাজা সিটির প্রধান ব্যাংকে হামলা চালায় ইসরায়েল।
গাজা অভুক্ত মানুষকে সহায়তা দিতে ভূমধ্যসাগর হয়ে এগিয়ে আসছে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার জাহাজ। ওই জাহাজে ড্রোন হামলা চালায় ইসরায়েল। এক বিবৃতিতে গতকাল ইতালি এ হামলার নিন্দা জানায়।