বিএনপি-জামায়াতের অনৈক্য দূরের চেষ্টা সনদ নিয়ে সমঝোতা ও জোটের আলোচনা এনসিপিসহ ৯ দলের - Prothom Eye
Our website is currently under construction. We’ll be back soon with the latest news and updates. Thank you for your patience.

বিএনপি-জামায়াতের অনৈক্য দূরের চেষ্টা সনদ নিয়ে সমঝোতা ও জোটের আলোচনা এনসিপিসহ ৯ দলের

লেখক: প্রতিবেদক ঢাকা
প্রকাশ: নভেম্বর ৬, ২০২৫

জুলাই সনদের বাস্তবায়ন পদ্ধতি ও গণভোটের সময় নিয়ে রাজনৈতিক সমঝোতার উদ্যোগ নিয়েছে এনসিপি, গণঅধিকার পরিষদ, এবি পার্টি এবং গণতন্ত্র মঞ্চভুক্ত ছয়টি দল। গতকাল বুধবার রাজধানীর পল্টনে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের কার্যালয়ে এই ৯ দলের জরুরি সভায় নিজেদের মধ্যে রাজনৈতিক জোটের সম্ভাব্যতা নিয়েও আলোচনা হয়। তবে সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি দলগুলো।

সভার পর ৯ দলের নেতারা জানান, জুলাই সনদ নিয়ে যে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে, তা দূর করতে বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে আলোচনা করা হবে। এদিকে গতকাল জামায়াত আলোচনার জন্য দলের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের এবং সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদের সমন্বয়ে কমিটি করেছে। যদিও বিএনপি এখন পর্যন্ত আলোচনার বিষয়ে কিছু বলেনি।

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন পদ্ধতি এবং গণভোটের সময় নিয়ে সমঝোতায় গত রোববার জামায়াত আলোচনার জন্য বিএনপিকে আহ্বান জানায়। পরদিন প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি বৈঠক থেকেও রাজনৈতিক দলগুলোকে সমঝোতার আহ্বান করা হয়। এ জন্য এক সপ্তাহ সময় দিয়েছে সরকার।

সরকার ও জামায়াতের আহ্বানে আলোচনায় বসতে সাড়া দেয়নি বিএনপি। দলটি জুলাই সনদে থাকা নোট অব ডিসেন্টসহ গণভোট চায় নির্বাচনের দিনে। জামায়াত নোট অব ডিসেন্টমুক্ত গণভোট চায় নভেম্বরে। এ বিরোধ নিষ্পত্তিতে দলটি আলোচনার জন্য সরকারকে মধ্যস্থতার আহ্বান জানিয়েছিল। তবে সরকার জানিয়েছে, তারা এ ভূমিকা পালন করবে না। রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজ উদ্যোগে আলোচনা করে সরকারকে দিকনির্দেশনা দিতে হবে। না পারলে সরকার এক সপ্তাহ পর নিজের মতো সিদ্ধান্ত জানাবে। তিন দিন পরও আলোচনার লক্ষণ দেখা না গেলেও হামিদুর রহমান আযাদ সমকালকে বলেছেন, অনানুষ্ঠানিক কথা চলছে।

সমঝোতায় ৯ দলের উদ্যোগ 

জুলাই সনদ নিয়ে ঐকমত্য তৈরিতে গত সেপ্টেম্বরেও আলোচনার উদ্যোগ নিয়েছিল ৯ দল, যা সফল হয়নি। পিআর পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ গঠন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের গঠন পদ্ধতির প্রস্তাব থেকে নোট অব ডিসেন্ট (ভিন্নমত) তুলে নিতে রাজি হয়নি বিএনপি। জামায়াত নির্বাচনের আগে গণভোটের দাবি ছাড়েনি।

এ পরিস্থিতিতে অনুষ্ঠিত গতকাল বুধবার ৯ দলের বৈঠকে ছিলেন গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সভাপতি অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান, মুখপাত্র ফারুক হাসান, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, জেএসডির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি তানিয়া রব, নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল্লাহ কায়সার এবং ভাসানী জনশক্তি পার্টির মহাসচিব ড. আবু ইউসূফ সেলিম।

হাসনাত কাইয়ুম বলেন, সরকারের দিক থেকে জুলাই সনদ ও গণভোটের বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ হতে দায়দায়িত্ব রাজনৈতিক দলগুলোকে দেওয়া হয়েছে। সেই জায়গা থেকে আমরা বসেছি, কীভাবে সমাধান করা যায়। কিছু বিষয় কাছাকাছি আসছি। অন্যান্য দলের সঙ্গেও আলোচনা করব।

সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান সমকালকে বলেন, ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশের পর বিভাজনের রাজনীতি লক্ষ্য করছি। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হয় কিনা– সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনকে সামনে রেখে নোট অব ডিসেন্ট, গণভোটসহ বিভিন্ন বিষয়ে বিএনপি-জামায়াতসহ বিভিন্ন দলের সঙ্গে আলোচনায় বসে সমস্যা সমাধানের উদ্যোগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু সমকালকে বলেন, মূল লক্ষ্য হচ্ছে রাজনৈতিক বিভাজন মিটিয়ে ফেব্রুয়ারিতে সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করা। এ জন্য বিএনপি ও জামায়াতের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। সবাইকে কিছুই না কিছু ছাড় দিতে হবে।

বিএনপি আলোচনায় বসতে রাজি কিনা– এ প্রশ্নে রাষ্ট্র সংস্কারের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দিদার ভূঁইয়া বলেছেন, যোগাযোগ করা হবে।

৯ দলের জোটের আলোচনা
বিএনপি গত সোমবার ২৩৭ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করে। গণসংহতির জোনায়েদ সাকি, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, গণঅধিকারের নুরুল হক নুর ও রাশেদ খান, জেএসডির তানিয়া রবের প্রত্যাশিত আসনে প্রার্থী দেয়নি বিএনপি। দলটির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা গণতন্ত্র মঞ্চ এবং গণঅধিকার চায়– এমন কিছু আসনেও প্রার্থী ঘোষণা হয়নি। ধারণা করা হচ্ছে, এসব আসনের কয়েকটিতে বিএনপির সমর্থন পাবেন মিত্র দলের নেতারা।

৯ দল সূত্র জানিয়েছে, এবারের নির্বাচনে জোট শরিকের প্রতীকে নির্বাচনের সুযোগ না থাকা, বিএনপির স্থানীয় নেতৃত্বের বিরোধিতা ও বিদ্রোহী প্রার্থীর ঝুঁকি রয়েছে। এ কারণে আসন ছাড় পেলেও জয় নিশ্চিত কিনা– এ নিয়ে সংশয় রয়েছে। এ ছাড়া ৯ দল জোট করতে পারে কিনা– এ আলোচনা হয়েছে বুধবারের বৈঠকে। সেপ্টেম্বরেও এ আলোচনা হয়েছিল। সেই সময়ে এনসিপি ও গণঅধিকারের একীভূত হওয়ার সম্ভাবনা নিয়েও কথা হয়েছিল। কিন্তু জোট বা একীভূত হওয়া যায়নি নেতৃত্ব নিয়ে বিরোধে।

বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, বিরোধ এড়াতে যৌথ নেতৃত্বে জোট করা যায় কিনা– এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। মজিবুর রহমান মঞ্জু এবং দিদার ভূঁইয়া বলেন, আলোচনা প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। তবে আশাবাদী হওয়ার মতো অগ্রগতি হয়েছে।

বৈঠকের পর মুখপাত্র ফারুক হাসান বলেন, অনেক দিন ধরেই আসন্ন নির্বাচনে বিএনপি ও জামায়াতের বাইরে নতুন কিছু করার চেষ্টা করছি। তা আবার আলোচনার টেবিলে এসেছে। যেহেতু আনুষ্ঠানিকভাবে আমরা কেউ বিএনপি বা জামায়াতের সঙ্গে জোটে যাইনি। তাই তৃতীয় শক্তি বা নতুন জোট হতে পারি কিনা, আলোচনা করছি। জনগণও চায় নতুন শক্তির আবির্ভাব হোক। বিএনপি-জামায়াতের বাইরে থাকা অন্য দলগুলোকেও যুক্ত করব।

এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, এনসিপি সব সময় আলোচনার পক্ষপাতী। সবার সঙ্গে মিলে যে কোনো সংকট দূরের আলোচনা হয়েছে বৈঠকে। সংস্কার নিয়ে সংকট এড়াতে সরকারকে সাহসী ভূমিকা নিতে হবে।