প্রকাশ: ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫ | ০৯:০৪
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাবে গত সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকগুলোর মোট ঋণের প্রায় ৩৬ শতাংশ খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। তবে ১৭টি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৫০ শতাংশের ওপরে। ৯০ শতাংশের বেশি খেলাপি রয়েছে ছয়টি ব্যাংকে। উচ্চ খেলাপির কোনো কোনো ব্যাংক আমানতকারীর টাকা যথাসময়ে ফেরত দিতে পারছে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক খাতের মোট ঋণস্থিতি ১৮ লাখ তিন হাজার ৮৪০ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপিতে পরিণত হয়েছে ছয় লাখ ৪৪ হাজার ৫১৫ কোটি টাকা। গত বছরের সেপ্টেম্বর খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল দুই লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা। মোট ঋণের যা ছিল ১৬ দশমিক ৯৩ শতাংশ। সে বিবেচনায় এক বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি।
ব্যাংকাররা বলছেন, উচ্চ খেলাপির এ সময়েও অনেক ব্যাংক তুলনামূলক ভালো অবস্থানে রয়েছে। গত সেপ্টেম্বর শেষে ৬১টি ব্যাংকের মধ্যে ২৩টির খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশের নিচে রয়েছে। ১০ শতাংশের বেশি তবে ২০ শতাংশের নিচে রয়েছে ১৩ ব্যাংকের খেলাপি। ২০ শতাংশের বেশি এবং ৫০ শতাংশের নিচে রয়েছে ৮টি ব্যাংকের। তবে ১৭ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৫০ শতাংশের বেশি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, গত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ঋণের নামে বিপুল অর্থ বের করা হয়েছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে যা বিদেশে পাচার হয়েছে। বেশ আগেই এসব ঋণখেলাপি হলেও নানা উপায়ে নিয়মিত দেখানো হয়েছিল। আবার বিভিন্ন নীতি সহায়তার আড়ালে খেলাপি কম দেখানো হয়। গত সরকারের পতনের পর থেকে সেই সুযোগ বন্ধ হয়েছে। ফলে খেলাপি ঋণ দ্রুত বাড়ছে।
৫০ শতাংশের বেশি যেসব ব্যাংকের খেলাপি
ব্যাংকগুলোর মধ্যে ৯০ শতাংশের বেশি খেলাপি হওয়া ব্যাংকের তালিকায় রয়েছে ছয়টি ব্যাংক। এর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে বিদেশি মালিকানার ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান। ব্যাংকটির এক হাজার ৩৭০ কোটি টাকা বা ৯৯ দশমিক ৮৪ শতাংশ খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। ইউনিয়ন ব্যাংকের খেলাপি ২৭ হাজার ১১৩ কোটি টাকা, যা ব্যাংকটির মোট ঋণের ৯৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ৫৯ হাজার ৯৮৮ কোটি টাকা বা ৯৬ দশমিক ২০ শতাংশ খেলাপি। গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের ১৪ হাজার ১৪ কোটি টাকা বা ৯৫ দশমিক ৭০ শতাংশ ঋণ এখন খেলাপি । পদ্মা ব্যাংকের পাঁচ হাজার ২২৯ কোটি টাকা বা ৯৪ দশমিক ১৭ এবং আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের ৬৩১ কোটি টাকা বা ৯১ দশমিক ৩৮ শতাংশ ঋণ খেলাপিতে পরিণত হয়েছে।
বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর মধ্যে খেলাপি ঋণের শীর্ষে রয়েছে এবি ব্যাংক। ব্যাংকটির ৩০ হাজার ১৩৬ কোটি বা ৮৪ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ ঋণ এখন খেলাপি। ন্যাশনাল ব্যাংকের ৩২ হাজার ৪০ কোটি বা ৭৫ দশমিক ৪৬ শতাংশ খেলাপি। বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের এক হাজার ৬৫৮ কোটি বা ৭১ দশমিক ১১ শতাংশ খেলাপি। সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ২৭ হাজার ৩০৮ কোটি টাকা বা ৭০ দশমিক ১৭ শতাংশ খেলাপি। আইএফআইসি ব্যাংকের ২৭ হাজার ৫৫ কোটি বা ৬০ দশমিক ৬৩ শতাংশ। এক্সিম ব্যাংকের ৩০ হাজার ৭১০ কোটি টাকা বা ৫৬ দশমিক ৮৬ শতাংশ খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। এ ছাড়া ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের এক লাখ ছয় হাজার ২৭৫ কোটি বা ৫৮ দশমিক ২৪ শতাংশ খেলাপি।
রাষ্ট্রীয় মালিকানার ব্যাংকগুলোর মধ্যে খেলাপি ঋণের শীর্ষে রয়েছে জনতা ব্যাংক। গত সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকটির ৭০ হাজার ৬৭১ কোটি টাকা বা ৭৩ দশমিক ১৮ শতাংশ খেলাপি। বেসিক ব্যাংকের খেলাপির হার ৭০ দশমিক ৫৯ শতাংশ। বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকে ৫২ দশমিক ৪৬ শতাংশ এবং আর রূপালী ব্যাংকের মোট ঋণের ৫১ দশমিক ১৯ শতাংশ খেলাপি।
খারাপ অবস্থায় পড়া এসব ব্যাংকের মধ্যে প্রাথমিকভাবে শরিয়াহ ভিত্তিক পাঁচটি ব্যাংক একীভূত করে সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকগুলো হলো– এক্সিম, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, সোশ্যাল ইসলামী, গ্লোবাল ইসলামী ও ইউনিয়ন ব্যাংক।