জীবনযাপন বিশ্ব মতামত সর্বশেষ

ইসরায়েলের আগ্রাসন ‘হলুদ রেখা’র ক্রমবর্ধমান গ্রাসে গাজার জনপদ

 প্রকাশ: ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫ | ০৫:৫২

যুদ্ধবিরতির পর আহমেদ হামেদ যখন গাজা শহরে তাঁর বাড়িতে ফিরে আসেন, বাড়িটি তখন ইসরায়েল আরোপিত তথাকথিত ‘হলুদ রেখা’ থেকে প্রায় ১ দশমিক ৫ কিলোমিটার পশ্চিমে ছিল। দুই মাস পর সেই দূরত্ব প্রায় ২০০ মিটারে সংকুচিত হয়ে পড়েছে।

৩১ বছর বয়সী হামেদ মিডলইস্ট আইকে বলেন, ‘যুদ্ধ শেষ হওয়ার আগে আমাদের বাড়িটি একটি বিপজ্জনক এলাকায় ছিল। আমাদের জন্য ফিরে আসা কঠিন ছিল। এ কারণে যুদ্ধবিরতির পরও আমরা দুই সপ্তাহ অপেক্ষা করি, উদ্দেশ্য ছিল বাড়িটি আরও নিরাপদ হোক। অবশেষে আমার পরিবার পূর্ব গাজা শহরের শুজাইয়াপাড়ার কাছে বাড়িতে ফিরে যেতে সক্ষম হয়। কিন্তু সুখ বেশি দিন রইল না। আবারও যুদ্ধের দামামা বেজে উঠল। পরদিন থেকেই এলাকায় বোমা ও গুলিবর্ষণের শব্দ শুনতে পেলাম। প্রতিদিন সূর্যাস্তের সময় হামলা শুরু করে দখলদার বাহিনী তা ভোর পর্যন্ত চালাত।’

তারপর এক রাতে প্রচণ্ড গোলাগুলির শব্দে জেগে উঠলাম আমরা। অন্যান্য বাসিন্দার মতো আমরাও ইসরায়েলের হামলা থেকে বাঁচতে পালিয়ে গেলাম। ভারী বোমাবর্ষণের কারণে কিছু পরিবার ঘণ্টার পর ঘণ্টা তাদের বাড়িতে আটকে থাকে। পরে তারা নিজ চোখে দেখতে পায় হলুদ রেখা ইতোমধ্যেই সরে গেছে। লাইনটি আরও এক কিলোমিটারেরও বেশি এগিয়ে এসেছে। হামেদ বলেন, পরিবারগুলো নীরবে পালিয়ে যাচ্ছে। যুদ্ধের সময় তো বিশ্ববাসী গাজাবাসীর কষ্টের কথা প্রচার করছিল। আর এখন যে কষ্টে আমরা ভুগছি, তা প্রচার পাচ্ছে না। নীরবেই বারবার বাস্তুচ্যুতির ঘটনা ঘটছে।

গত ১০ অক্টোবর যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েল প্রতিদিন গাজায় আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে। এ পর্যন্ত তারা ৮০০ বার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে। এতে নিহত হয়েছে অন্তত ৩৮৬ জন। এসব হামলা চুক্তির স্পষ্ট লঙ্ঘন। এদিকে ইসরায়েলের আগ্রাসনে এ পর্যন্ত ৭০ হাজার ৬৫৪ ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছে।

জ্যেষ্ঠ কমান্ডারকে হত্যার কথা নিশ্চিত করেছে হামাস

ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের জ্যেষ্ঠ কমান্ডার রায়েদ সাদ ইসরায়েলের হামলায় নিহত হয়েছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে হামাস। শনিবার ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানায়, তারা গাজা শহরের কাছে এক হামলায় সাদকে হত্যা করেছে। গাজায় সর্বশেষ ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ২৫ জন আহত হয়েছে। গতকাল রোববার এক ভিডিও বিবৃতিতে সাদের নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে হামাসের গাজাপ্রধান খলিল আল-হাইয়া। তিনি ইসরায়েলকে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের জন্য অভিযুক্ত করেছেন।

‘আমার কণ্ঠস্বর শুনতে পেয়ে কেঁদেছিলেন মা’

ফিলিস্তিনি তরুণী রোয়াদ আলাগা এখন আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন। যুদ্ধের মধ্যে গাজা ত্যাগের সময় নানা ঘাত-প্রতিঘাত তাঁর সামনে হাজির হয়েছিল। তিনি আলজাজিরায় এক বর্ণনায় লিখছেন, ‘গত সেপ্টেম্বরে যখন গাজা ছাড়ার পরিকল্পনা করি, তখন প্রতিদিনই আশপাশে বোমা হামলা হচ্ছিল। দক্ষিণ খান ইউনিসে আমার পরিবার থাকে। যুদ্ধ তীব্র হওয়ার মধ্যে আমি এবং আমার পরিবার পাঁচবার বাস্তুচ্যুত হয়েছিলাম।

আলাগা বলেছেন, ‘ভাগ্যক্রমে গাজা ছেড়ে যাওয়ার অনুমতিপত্রে ১৩০ জনের সঙ্গে আমার নাম এলো। এটা আমার কাছে অবাস্তব মনে হচ্ছিল। সকালে যখন আমি ক্রসিংয়ের কাছে পৌঁছালাম, তখন লাইনে দাঁড়িয়ে অনেক মানুষ। কেউ কথা বলেনি। সবার চেহারায় বিচ্ছেদের বেদনা। আমি জর্ডানে পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত বাড়িতে ফোন করিনি। যখন আমার মা আমার কণ্ঠস্বর শুনতে পেলেন, তিনি কেঁদেছিলেন। আমার নিরাপদ অবস্থানের আনন্দ তাঁকে কাঁদিয়েছিল।’